জেলা প্রতিনিধি, নাটোর: নাটোরের বড়াইগ্রামে দাম ভালো থাকায় কৃষকরা এবার ব্যাপক হারে পাট চাষে ঝুঁকেছেন। কিন্তু দীর্ঘ অনাবৃষ্টি আর খরায় ফলন কম হওয়ার পাশাপাশি পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
বিকল্প উপায় না পেয়ে এবার তারা বাধ্য হয়ে পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। প্রতি বিঘা জমির পাট জাগ দিতে তাদের দেড় থেকে দুই হাজার টাকা বাড়তি খরচ পড়ছে বলে জানা গেছে।
আবার কোথাও কোথাও বিলে পানি না থাকায় নদীর সামান্য পানির দখল নিয়ে চাষিদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির ঘটনাও ঘটছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছেন কৃষকরা। বর্তমানে এসব জমির পাট কাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু নদী-নালা, খাল-বিলে পানি না থাকায় চাষিরা ভাড়া দিয়ে পুকুরে পাট জাগ দিচ্ছেন।
এ সুযোগে কেউ কেউ পুকুরের মাছ বিক্রি করে দিয়ে পাট জাগের জন্য পুকুর লিজ দিচ্ছেন। এতে চাষিদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
উপজেলার রয়না গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিন বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে এবার বিলে বা নদীতে পানি নেই। আবার পাট কাটার সময় হয়ে গেছে। কিন্তু জাগ দেওয়ার পানি না থাকায় পাট কাটতে পারছিলাম না। শেষে উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে পুকুর ভাড়া করে পাট জাগ দিয়েছি।
রোলভা গ্রামের পুকুর মালিক খাদেমুল ইসলাম বলেন, আমার প্রায় দুই বিঘার পুকুরে আমি মাছ চাষ করি। কিন্তু পাট জাগ দেওয়ার জন্য সবাই পুকুর ভাড়া নিতে চাইল, তাই সব মাছ বেঁচে দিয়েছি। এর পর গ্রামের ৪-৫ জন কৃষক মিলে ১৮ হাজার টাকায় পুকুরটি ভাড়া নিয়ে তারা পাট জাগ দিয়েছেন।
রয়না গ্রামের পুকুর মালিক আনোয়ার হোসেন গাজী বলেন, আমার দেড় বিঘার একটি পুকুরে পাট জাগ দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ দুই হাজার টাকা করে নিলেও আমি প্রতি বিঘা জমির পাট জাগ দিতে ১৫০০ টাকা করে নিচ্ছি। এ পর্যন্ত ১১ বিঘা জমির পাট জাগ দেওয়া হয়েছে। আরও তিন-চার বিঘা জমির পাট জাগ দেওয়া যাবে।
কুরশাইট গ্রামের সাহাবুল ইসলাম বলেন, বিলে পানি নেই, সেভাবে পুকুরও ভাড়া পাচ্ছি না। তাই নদীই পাট জাগ দেওয়ার একমাত্র ভরসা। কিন্তু প্রভাবশালী কৃষকরা আমাদের পাট নিয়ে নদীতে নামতেই দিচ্ছে না, তাদের অনেকে পাট এখনো কাটেইনি, কিন্তু জায়গা দখল করে রাখছে জাগ দেওয়ার জন্য। এদিকে আমাদের পাট কাটতে না পেরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ক করব কিছু বুঝতে পারছি না।
মামুদপুর গ্রামের পাটচাষি আবু রায়হান মন্ডল বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে চাষ, পাট বীজ, সার, কীটনাশক দেওয়া এবং আগাছা পরিষ্কার, পাট কাটা, পরিবহণ খরচ, জাগ দেওয়া, ধোয়া ও শুকানোর শ্রমিক খরচ বাবদ ১৪-১৫ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। আর পুকুর ভাড়া নিয়ে জাগ দিতে খরচ আরও দেড়-দুই হাজার টাকা বেশি পড়ছে। এবার অতিরিক্ত খরার কারণে বিঘাপ্রতি ৭-৮ মণ হারে পাট উৎপাদন হয়েছে। বাজারে বর্তমানে ভালো মানের প্রতি মণ পাট ৩০০০-৩৫০০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
তবে লক্ষ্মীকোল এলাকার পাট ব্যবসায়ী আবু শাহীন বলেন, আগে বিলে বা নদীতে বেশি পানিতে পাট জাগ দিয়ে উপড়ে কলাগাছ দিয়ে ডুবিয়ে রাখা হতো। এতে পাটের আঁশের রঙ ভালো হতো। কিন্তু এ বছর অল্প পানিতে কাদামাটি দিয়ে চাপা দিয়ে পাট জাগ দেওয়ায় আঁশের রঙ বেশি ভালো হচ্ছে না। এতে এসব পাটের দাম কম হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, এ বছর ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা খুশি। তবে পানির অভাবে চাষিদের পাট জাগ দিতে বেশ ভোগান্তি হচ্ছে, তাই বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে কৃষকদের রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট থেকে আঁশ ছাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে এবার বেশিরভাগ কৃষক পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন।